Course Content
RBU MA Geography Study notes (4th SEM)
    About Lesson

    সম্পদের ধারণা

    Resource শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “resurgere” থেকে, যার অর্থ “পুনরুত্থান” বা “পুনরায় উঠে দাঁড়ানো।” মানুষের জন্য প্রকৃতিতে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান যখন বিশেষভাবে ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে, তখন সেই উপাদানগুলোকে রিসোর্স বলা হয়। রিসোর্স বা সম্পদ হলো সেই প্রাকৃতিক উপাদান, যা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং যেগুলোর উৎপাদন, পুনঃব্যবহার বা প্রতিস্থাপন সম্ভব।

    মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদগুলো সবসময় একইভাবে মানুষকে সেবা দেয় না। বরং মানুষের জ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন উপাদান সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়।

    সম্পদের বৈশিষ্ট্য:

    সম্পদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এগুলোকে অন্য উপাদান থেকে আলাদা করে।

    1. উপযোগিতা: সম্পদ সেই সমস্ত উপাদান যা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। যেমন, কয়লা, খনিজ তেল, জল, মাটি ইত্যাদি। এগুলোকে উপযোগী করতে মানুষের প্রয়াসের প্রয়োজন হয়।

    2. দুষ্প্রাপ্যতা: সম্পদগুলি সাধারণত সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়। কিছু সম্পদ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, আবার কিছু সম্পদ খুব কম পাওয়া যায়।

    3. প্রাপ্যতার জায়গা: সম্পদের প্রাপ্যতা নির্ভর করে ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিস্থিতির উপর। যেমন, খনিজ পদার্থগুলো ভূ-অভ্যন্তরের বিশেষ স্থানগুলোতে পাওয়া যায়।

    4. মূল্য: সম্পদগুলির আর্থিক মূল্য রয়েছে, যা চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। কিছু সম্পদের দাম অত্যন্ত বেশি হয়।

    5. পরিবর্তনশীলতা: সম্পদের চাহিদা, উপযোগিতা এবং প্রাপ্যতা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।

    সম্পদের শ্রেণীবিভাগ
    সম্পদ বিভিন্ন ভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। প্রধানত, জীববিজ্ঞান, নবীকরণযোগ্যতা, প্রাপ্যতা, এবং বিতরণ ইত্যাদি মাপকাঠিতে রিসোর্সগুলির শ্রেণীবিভাগ করা হয়।

    জৈব-অজৈব (Biogenesis) ভিত্তিতে রিসোর্সের শ্রেণীবিভাগ

    সম্পদগুলিকে তাদের উৎপত্তির ভিত্তিতে দুটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়: জৈব এবং অজৈব সম্পদ।

    1. জৈব সম্পদ (Biotic Resources)
      জীবন্ত বা পূর্বে জীবন্ত ছিল এমন উপাদান থেকে প্রাপ্ত সম্পদকে জৈব সম্পদ বলা হয়। এই ধরনের সম্পদগুলোর মধ্যে উদ্ভিদ, প্রাণী, কাঠ, মাছ, পশম, খাদ্য শস্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এই সম্পদগুলি জীব জগৎ এবং প্রাকৃতিক চক্রের মাধ্যমে পুনরায় উৎপাদিত হতে পারে।

      উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য শস্য হলো একটি জৈব সম্পদ যা কৃষিকাজের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ সম্পদ মানুষ এবং অন্যান্য জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    2. অজৈব সম্পদ (Abiotic Resources)
      অজীবন্ত উপাদান থেকে প্রাপ্ত সম্পদকে অজৈব সম্পদ বলা হয়। এগুলো মূলত ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। যেমন, খনিজ পদার্থ, ধাতু, বালি, মাটি, পানি ইত্যাদি।

      উদাহরণস্বরূপ, খনিজ পদার্থ হলো অজৈব সম্পদ যা ভূগর্ভে পাওয়া যায় এবং খনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এগুলোর পুনঃপ্রাপ্যতা সাধারণত কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ।

    নবীকরণযোগ্যতার (Renewability) ভিত্তিতে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ

    সম্পদগুলিকে তাদের পুনর্নবীকরণ ক্ষমতার ভিত্তিতে দুটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়: নবীকরণযোগ্য এবং অনবীকরণযোগ্য সম্পদ।

    1. নবীকরণযোগ্য সম্পদ (Renewable Resources)
      যে সমস্ত সম্পদ পুনরায় উৎপাদন করা সম্ভব বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পুনঃসৃষ্ট হতে পারে, সেগুলিকে নবীকরণযোগ্য সম্পদ বলা হয়। যেমন, সূর্যালোক, বায়ু, জল, বন, প্রাণী ইত্যাদি। এই সম্পদগুলি প্রকৃতির প্রাকৃতিক চক্রের মাধ্যমে পুনরায় উৎপাদিত হয়।

      উদাহরণস্বরূপ, বন হলো একটি নবীকরণযোগ্য সম্পদ। যদি বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়, তবে এটি পুনরায় গজানো সম্ভব যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। নবীকরণযোগ্য সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    2. অনবীকরণযোগ্য সম্পদ (Non-renewable Resources)
      যে সমস্ত সম্পদ একবার ব্যবহার করলে পুনরায় উৎপাদন করা সম্ভব নয়, সেগুলিকে অনবীকরণযোগ্য সম্পদ বলা হয়। যেমন, কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। এই সম্পদগুলি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত হতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় নেয় এবং পুনরায় উৎপাদিত করা যায় না।

      উদাহরণস্বরূপ, খনিজ তেল হলো একটি অনবীকরণযোগ্য সম্পদ। একবার এটি ব্যবহার করলে পুনরায় উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তাই এই ধরনের সম্পদগুলির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    প্রাপ্যতা ও বিতরণের ভিত্তিতে সম্পদের শ্রেণীবিভাগ

    সম্পদগুলির প্রাপ্যতা এবং বিতরণের ভিত্তিতে তাদের শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। এটি মূলত অঞ্চলভিত্তিক এবং বৈশ্বিক স্তরে সম্পদের বিস্তৃতি ও প্রাপ্যতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

    1. স্থানীয় সম্পদ (Localized Resources)
      যে সমস্ত সম্পদ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট এলাকায় পাওয়া যায়, তাদেরকে স্থানীয় সম্পদ বলা হয়। এই ধরনের সম্পদগুলি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় সীমাবদ্ধ এবং অন্য কোথাও সহজে প্রাপ্ত হয় না। যেমন, একটি বিশেষ ধরণের মাটি বা খনিজ পদার্থ যা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাওয়া যায়।

    2. সার্বজনীন সম্পদ (Ubiquitous Resources)
      যে সমস্ত সম্পদ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত এবং সহজে প্রাপ্ত হয়, তাদেরকে সার্বজনীন সম্পদ বলা হয়। যেমন, বায়ু, জল, সূর্যের আলো ইত্যাদি। এই সম্পদগুলি প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায় এবং স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়।

      উদাহরণস্বরূপ, সূর্যালোক একটি সার্বজনীন সম্পদ। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি স্থানে এটি প্রাপ্ত হয় এবং মানুষ এর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কাজে।

    Bookmark
    0% Complete
    error: Content is protected !!
    Scroll to Top