Course Content
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের নোট-প্রথম সেমিস্টার (RBU MA DDE Geography -1st SEM)
    About Lesson

    1. Explain the Global hydrological cycle. / What is global hydrological cycle? What are the salient features of it? / What are the main components of hydrological cycle? / What are the different phases of hydrological cycle? Why is it important in geography?

     সংজ্ঞা (Definition):

    জল ও ভূমিভাগের মধ্যে যাবতীয় প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং প্রাণীজগতের সঙ্গে তার সম্পর্কই হল জলবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয়। বলাবাহুল্য এখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার বাইরে অবস্থিত মুক্ত জলকেও ধরা হচ্ছে। জলবিজ্ঞানের মূল ধারণা স্পষ্ট হয় জলচক্রের ব্যাখ্যা ও বর্ণনার মাধ্যমে। মহাদেশ ও মহাসমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে জলের সঞ্লন এবং বৃষ্টিপাতের পর ভূপৃষ্ঠ, মাটি ও শিলাস্তরের মাধ্যমে আবার সমুদ্রে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে জলচক্র (Hydrological cycle) বলে।

    জলচক্রের শর্ত (Conditions of Hydrological Cycle): 

    জলচক্র মূলত তিনটি শর্তের ওপর নির্ভরশীল।এগুলি হল:

    1. যে-শক্তি জলচক্রকে চালিত করে তার প্রকৃতি,
    2. জলের সহজাত বৈশিষ্ট্য,
    3. জলের ধারক ও বাহক হিসেবে বায়ুমণ্ডল, ভূত্বকের শিলা, মাটি ও ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য।

    জলচক্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য (Main Characteristics of Hydrological Cycle):

    জলচক্র সম্বন্ধে সঠিকভাবে জ্ঞানলাভ করতে হলে জলচক্রের নিম্মোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি জানা একান্ত প্রয়োজনীয়; যেমন-

    1. পৃথিবীতে জলচক্র একাধিক ও অবিনশ্বর ।
    2. স্থান-কাল ও জলের রূপভেদের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই চক্রের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
    3. জলচক্রের উপর অক্ষাংশ, সৌরশক্তির পরিমাণ, মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা, ভূ-তাত্ত্বিক ও ভূ-ত্বাত্তিক ও ভূ-প্রাকৃতিক প্রভাব প্রভৃতি ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত হয়।
    4. জলচক্রের সঙ্গে বাষ্পীভবন ও অধঃক্ষেপণ এই দুটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিশেষভাবে যুক্ত।
    5. মেরু বা মরু অঞ্চলের তুলনায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলচক্র স্পষ্ট ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে।
    6. জলচক্রের সাহায্যে কোন দেশের বা মহাদেশের জলের আয়-ব্যয় (Hydrological Budget) বোঝা বা জানা যায়।
    7. বিভিন্ন প্রকার জলচক্র তথ্য, বৃষ্টিপাত, জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য, ভৌমজল সংক্রান্ত তথ্য, বাষ্পীভবন, বাষ্পমোচন প্রভৃতি এই জলচক্রের দ্বারা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা সম্ভবপর হয়।

    জল চক্রের উপাদান সমূহ (Elements of hydrological cycle):

    জলচক্রের বিভিন্ন উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

    (১) বাষ্পীভবন (Evaporation):

    জলচক্রের শুরু বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া দ্বারা। সৌররশ্মির তাপীয় ফলের প্রভাবে সাগর, মহাসাগর, নদী, খাল, বিল, জলাশয়ের জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত হয়। যে প্রক্রিয়ায় জল বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে বাষ্পীভবন (Evaporation) বলা হয়। শীতের দিনের তুলনায় গ্রীষ্মের দিনে তাপমাত্রা অধিক থাকার ফলে বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হয় এবং উদ্ভূত জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত অবস্থায় অবস্থান করে। জলীয়বাষ্প বায়ুর অন্যান্য উপাদানের তুলনায় হাল্কা বলে তা দ্রুত উর্দ্ধ বায়ুমণ্ডলে উত্থিত হয় এবং কালক্রমে ঘনীভূত হয়ে জলকণার সৃষ্টি করে।

    বাষ্পীভবনের হার (Evaporation rate) চাপের প্রভাব, বায়ু ও তাপমাত্রা, সৌরতাপ, বাতাসের গতি, বায়ুর শুষ্কতা ও জলের বিশুদ্ধতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। তবে বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাষ্পীভবনের হারও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

    (২) ঘনীভবন (Condensation):

    জলীয়বাষ্পের জলকণা যত সূক্ষ হবে বাষ্পীয় চাপ তত বেশি হবে। ফলে বিশুদ্ধ জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হবার আগেই আবার বাষ্পীভূত হয়। এই কারণে বিশুদ্ধ জলীয়বাষ্পের তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে গেলেও সাধারণতঃ কোনো ঘনীভবন হয় না, বায়ু কেবলমাত্র পরিপৃক্ত অবস্থায় থাকে। অপরদিকে প্রচুর পরিমানে ঘনীভবন কেন্দ্রক থাকলে দ্রুত ঘনীভবন ঘটে এবং কম বারিবিন্দুতে পরিণত হয়। ঘনীভবন প্রক্রিয়া লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে-

    • বায়ু শীতল হলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।
    • জলীয়বাষ্প বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধুলিকণাকে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয়। 
    • বায়ুমণ্ডলীয় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫ শতাংশ না হওয়া পর্যন্ত জলকণার বৃদ্ধি চলতে থাকে।
    • জলকণা যতই বড় হোক না কেন তার ফলে ঘনীভবন কমতে থাকে, তাই জলকণা বড় হওয়ার জন্যেই সময় বেশি লাগে।
    • জলকণা সৃষ্টির পর ঘনীভবন কেন্দ্রগুলির চতুর্দিকে জলকণা দ্রুত সংযোজিত হয়ে এদের আকৃতি বড় হতে থাকে।
    • সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণাগুলি নিজেদের মধ্যে আকর্ষণজনিত বলের প্রভাবে বড় জলকণাতে পরিণত হয়। এবং পরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বৃষ্টিকণারূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে।

    (৩) অধঃক্ষেপণ (Precipitation):

    বায়ুমণ্ডলের ঘনীভূত জলীয়বাষ্প কঠিন অথবা তরলে পরিণত হলে যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ- পৃষ্ঠে পতিত হয়, তখন তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। অবশ্য বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প কুয়াশা, শিশির, তুহিন প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের অন্তর্গত নয়। এই কারণে বৃষ্টিপাত, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি এবং এদের বিভিন্ন রূপ অধঃক্ষেপণ হিসাবে গণ্য করা যায় না। যা সংক্ষেপে ppt নামে পরিচিত। এই ppt-এর মান, সময়কাল, তীব্রতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরিমাপ করা যায়।

    (৪) রোধন (Interception):

    বর্ষণের সময় বৃষ্টিপাতের সম্পূর্ণটাই সরাসরি পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছায় না। কারণ এর বেশ কিছু অংশ সবুজ উদ্ভিদ, বায়ুমণ্ডল ও সূর্যের তাপে সরাসরি বাষ্পীভবন ঘটে। ফলে মোট অধঃক্ষেপণের বেশ কিছুটা কম অংশ ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠে পতিত জলধারা প্রবাহের সময় নানান মাধ্যমের দ্বারা শোষিত হয় বা বাধাপ্রাপ্ত হয়। একে বলা হয় রোধন (Interception)। রোধন-এর কিছু পরিমাণ জল বাষ্পীভূত হলেও অবশিষ্ট কিছু অংশ ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা মোট জলের বাহ্যিক অবস্থানকে বৃদ্ধি করে।

    (৫) শোষণ (Absorption):

    বর্ষণের দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের সাথে যে জল সংযোজিত হয়, তার প্রভাবে মৃত্তিকা আর্দ্র হয়ে ওঠে। ভূমিভাগ সম্পৃক্ত হবার পর ভূ-পৃষ্ঠের উপর পতিত জলরাশি হাল্কা একটি জলের আস্তরণের মত ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। একে বলা হয় পৃষ্ঠদেশীয় জলপ্রবাহ (Surface run-off), যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকার কণার শোষণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

    জলচক্রের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক (Importance factors of Hydrological Cycle):

    পৃথিবীতে জলচক্র কয়েকটি শর্তের উপর নির্ভর করে। যেমন—

    (১) সৌররশ্মি (Solar Radiation): 

    জলচক্রকে সর্বদা সচল করার ক্ষেত্রে সৌরশক্তির উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। সৌররশ্মিই জলকে বাষ্পে পরিণত করে, ফলে জলীয় বাষ্প শীতলতার সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয় পরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বৃষ্টিকণারূপে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। তাই যে অঞ্চলে সৌররশ্মির অভাব নেই সেই সকল অঞ্চলে জলচক্র সঠিকভাবে সঞ্চালিত হতে পারে। এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন মেরুঅঞ্চল ও মরু অঞ্চলের চেয়ে নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে জলচক্র সতত সক্ৰিয়শীল।

    (২) জলভাগের উপস্থিতি (Presents of water Body):

    জলভাগ ছাড়া বাষ্পীভবন হওয়া সম্ভবপর নয়। তাই জলচক্রের জন্য ভূ-পৃষ্ঠে জলের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন, সে সমুদ্র, নদী, নালা, খাল, বিল পুকুর যে কোন জলাধার হলেও চলবে। তাই পৃথিবীর যে অংশে জলভাগের পরিমাণ বেশি সেই অংশে জলচক্র সক্রিয় হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষায় যেহেতু প্রসারতা বেশি এমনকি জলভাগের পরিমাণও বেশি তাই এই অঞ্চলে অধিক জলচক্র সক্রিয়। ভূ-পৃষ্ঠ পৃথিবীর মোট ৯৭ ভাগ জল ধরে রাখে ।

    (৩) বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি (Presents of Atmosphere):

    বায়ুমণ্ডল ছাড়া জলচক্র ঘটা সম্ভবপর নয়, কারণ বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ পরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠে বৃষ্টিকণারূপে পতিত হয়। অন্যদিকে এই বায়ুমণ্ডলের অবস্থান নির্ধারণ করে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বা অধঃক্ষেপণের পরিমাণ কেমন হবে।

    জলচক্রের বিভিন্ন পর্যায় (Different phases of Global Hydrological Cycle):

    ১.মহাসমুদ্র পর্যায় (Oceanic phase):

    পৃথিবীর জলচক্রের অন্তর্গত জলের প্রধান উৎস হল মহাসমুদ্র অঞ্চল। মোট বাষ্পীভবনের ৮৪ শতাংশ ঘটে মহাসমুদ্র থেকে। তবে মহাসমুদ্র ছাড়াও মহাদেশীয় ভূভাগ থেকে মোট বাষ্পীভবনের ১৬ শতাংশ ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এই পর্যায়কে মহাসমুদ্র ও মহাদেশ পর্যায় বলা উচিত কারণ মহাদেশের ওপরেও জলভাগের উপস্থিতি এবং আর্দ্র শিলা ও মাটির উপস্থিতি কম নয় এবং এইসব আর্দ্র শিলা, মাটি এবং জলভাগ থেকে যথেষ্ট বাষ্পীভবন ঘটে। উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার কারণে মোট বাষ্পীভবনে প্রস্বেদনজাত বাষ্পের উপস্থিতিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বলাবাহুল্য, বিভিন্ন ভূদৃশ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রণালীতে বাষ্পীভবনের হার বৈষম্যমূলক। ৪.১ নং সারণিতে পৃথিবীর বিভিন্ন উদ্ভিদ অঞ্চলের বাষ্পীভবনের পরিমাণের পরিসংখ্যান রয়েছে।

     মহাসমুদ্র পর্যায়েও অক্ষাংশের পার্থক্যে বাষ্পীভবনের পার্থক্য হয়। মহাসমুদ্র থেকে যে পরিমাণ জল পৃথিবীর জলচকের অন্তর্ভুক্ত হয় তার পরিমাণ হল ১,৩৫০,৪০ ঘনকিলোমিটার x ১০৩। সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে মহাদেশ থেকে যে পরিমাণ জল জলচক্রের অন্তর্ভুক্ত হয় তা হল ১২৪,০০০ ঘনকিলোমিটার x ১০ – (Lvovich, ১৯৪৫)।

    ২. বাষ্পীভবন পর্যায় (Evaporation phase):

    জলচক্রের অন্তর্গত জল তার প্রাথমিক সঞ্চলনের পর্যায়ে সূর্যের তাপে জলীয় অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় যায়। বায়ুমণ্ডল পর্যায়ে মহাসমুদ্র এবং মহাদেশ থেকে জল বাষ্পীভূত হতে শূন্যে বা আকাশে ওঠে, কারণ জলীয় বাষ্প শুষ্ক বায়ুর তুলনায় হালকা। এই পর্যায়ে যে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া ঘটে তা শুধুমাত্র মহাসমুদ্র এবং মহাদেশের জলভাগের ওপরের স্তর থেকে ঘটে না, মহাদেশের আর্দ্র শিলাস্তর, মাটি এবং উদ্ভিদ থেকে সামগ্রিকভাবে এই বাষ্পীভবন ঘটে। বলাবাহুল্য, উদ্ভিদের শরীর থেকে যে বাষ্পীয় প্রস্বেদন ঘটে তা এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর জলচক্রের অন্তর্গত বাষ্পীভূত জলের মোট পরিমাণ মহাসমুদ্র অংশে ৪৪৫ এবং মহাদেশ অংশে ৭১ ঘনকিলোমিটার × ১০ (L’vovich, ১৯৪৫)।

    ৩. ঘনীভবন পর্যায় (Condensation phase):

    ট্রোপোস্ফিয়ারের মধ্যে কিছুটা ওপরের দিকে বাষ্পীভূত জল ঘনীভূত হতে থাকে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঘনীভবনের জন্য কোনো একটি সূক্ষ্ম এবং কঠিন বস্তুকণার প্রয়োজন হয়। জলীয়বাষ্পের উপস্থিতির মাত্রা অর্থাৎ আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণের ওপর এই ঘনীভবন নির্ভর করে। যে বস্তুকণার ওপরে ঘনীভবন ঘটে তা হাইগ্রোস্কোপিক নিউক্লিয়াস বলে পরিচিত। সাধারণত ধূলোর কণা, ধোঁয়ার কণা, লবণের কণা, কিংবা কোনো রাসায়নিক যৌগ এরোসলের আকারে ঘনীভবনের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। হাইগ্রোস্কোপিক নিউক্লিয়াসের আয়তন ০.০০১//m থেকে ১০/m পর্যন্ত হতে পারে। সবচেয়ে ছোটো আকারে, অর্থাৎ ০.০০১/ আয়তনে ঘনীভবনের কেন্দ্র হিসেবে বস্তুকণা খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে না, কারণ বাতাস অতি-সম্পৃক্ত না হলে এই ঘনীভবন কেন্দ্র কাজ করে না। অন্যদিকে ১০/m বা তার বেশি হলে ওই কণা বেশিক্ষণ বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে না। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে সামুদ্রিক বাতাসে ১ মিলিয়ন ঘনীভবন কেন্দ্র থাকতে পারে, মহাদেশীয় বাতাসে তা ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন।

    ঘনীভবন শুরু হবার পর, অর্থাৎ ঘনীভবন কেন্দ্রের ওপর জলীয়বাষ্পের সংগ্রহ বাড়তে থাকলে ক্রমশ তা মেঘকণায় পরিণত হয়। মেঘকণার ব্যাসার্ধ ২১ থেকে ৫০/m। মেঘকণা বৃষ্টির কণায় পরিণত হলে তার ব্যাস ১ মিলিমিটারের বেশি হয়। জলীয়বাষ্প থেকে কীভাবে বৃষ্টির কণা তৈরি হয় বার্জারন-ফিন্ডিসেন তত্ত্ব এবং সংঘর্ষ তত্ত্ব (Bergeron-Findiesen Theory, Collision Theory) তা ব্যাখ্যা করে।

    ৪. অধঃক্ষেপণ পর্যায় (Precipitation phase): 

    বৃষ্টির জলকণা ছাড়াও তুষারকণা, এবং নানা আকারের বরফের কণায় অধঃক্ষেপণ ঘটতে পারে সূক্ষ্ম জলকণা থেকে শুরু করে অধঃক্ষেপণের অন্তর্গত বড়ো আকারের করকা ০.৭৬ কিলোগ্রাম বা ৭৬০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

    অধঃক্ষেপণের ফলে মহাসমুদ্র ও মহাদেশ থেকে যে জল বাষ্পীভূত হয়ে উঠে গিয়েছিল তা মহাদেশ ও মহাসমুদ্রের ওপর ফিরে আসে। বলাবাহুল্য, বৃষ্টির জলকণা হিসাবে তা যত সহজে মহাসমুদ্র ও মহাদেশের জলভাগে মিশে যায় কিংবা মহাদেশের ভূপৃষ্ঠের ওপর প্রবাহিত হয়, স্নো, হেইল, হোর ফ্রস্ট কিংবা রাইম অবস্থায় তা অত তাড়াতাড়ি জলচক্রের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয় না) মহাদেশীয় ভূভাগের ওপর কোনো একটি সময় পর্যন্ত অবস্থান করার পর তা গলে গেলে আবার জলচক্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্থানীয় আবহাওয়া, সমগ্র পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর কেলাসিত জল কত দ্রুত আবার জলচক্রের সঞ্চলনের অন্তর্ভুক্ত হবে তা নির্ভর করে। (পৃথিবীর জলচক্রের অন্তর্গত মোট অধঃক্ষেপণের পরিমাণ মহাসমুদ্র অংশে ৪১২ এবং মহাদেশ অংশের ওপর ১০৪ ঘন কিলোমিটার × 

    জলচক্রের গুরুত্ব (Significance of water cycle):

    জলচক্রের গুরুত্বগুলিকে নিম্নে আলোচনা করা হল। যথা—

    (১) জলচক্রের সাহায্যে কোন দেশের বা মহাদেশের জলের আয় ও ব্যয়ের হিসেব (Hydrological Budget) জানা যায়। যার সাহায্যে ঐ দেশের জলবায়ু সহজে নির্ধারণ করা সম্ভবপর হয়।

    (২) জলচক্রের সঙ্গে বাষ্পীভবন ও অধঃক্ষেপণ এই দুটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিশেষভাবে যুক্ত থাকায় প্রকৃতিতে পরিবেশগত সমস্যাগুলিকে নির্ধারণ করা সহজ হয়।

    (৩) পৃথিবীর স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগের পরিমাণ অধিক (৭১ ভাগ জল এবং ২৯ ভাগ স্থল) তবু এই দুই অংশের মধ্যে জলের বিনিময় ঘটে জলচক্রের মাধ্যমে।

    (৪) পৃথিবীকে অক্ষাংশগতভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে নিরক্ষরেখা হতে যত উত্তর বা দক্ষিণে যাওয়া যায় ততই বাষ্পীভবন ও অধঃক্ষেপনের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। কোথাও বাষ্পীভবন অধিক আবার কোথাও অধঃক্ষেপন অধিক কিন্তু এই অসমতার মধ্যে সমতা রক্ষা করে চলেছে জলচক্র।

    (৫) উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে মৃত্তিকা হতে জল ও খনিজ পদার্থ শোষণ করে তার কান্ডের মাধ্যমে পাতায় পাঠায় এবং সেখানে সূর্যালোক ও কার্বন ডাইঅক্সাইড-র সাহায্যে খাদ্য তৈরি করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এইভাবে উদ্ভিদ নিজে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করে থাকে। এই মৃত্তিকাস্থ জল বা আর্দ্রতা সরবরাহ করে থাকে জলচক্র।

    2. What is the significance of the global hydrological cycle with specific reference to storage, transportation and evaporation.

    জল ও ভূমিভাগের মধ্যে যাবতীয় প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং প্রাণীজগতের সঙ্গে তার সম্পর্কই হল জলবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয়। বলাবাহুল্য এখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার বাইরে অবস্থিত মুক্ত জলকেও ধরা হচ্ছে। জলবিজ্ঞানের মূল ধারণা স্পষ্ট হয় জলচক্রের ব্যাখ্যা ও বর্ণনার মাধ্যমে। মহাদেশ ও মহাসমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে জলের সঞ্লন এবং বৃষ্টিপাতের পর ভূপৃষ্ঠ, মাটি ও শিলাস্তরের মাধ্যমে আবার সমুদ্রে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে জলচক্র (Hydrological cycle) বলে।

    বাধাপ্রাপ্ত সঞ্চয় ও বাষ্পীভবন (Interception storage and Evaporation): 

    বৃষ্টিপাতের কিছু অংশ ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হওয়ার পূর্বেই উদ্ভিদ পাতায়, ঘর-বাড়ি ইত্যাদিতে বাধা পেয়ে সঞ্জিত হয় এবং সরাসরি বাষ্পীভূত হয়। এছাড়া মৃত্তিকায় পতিত হয়েও ভূ-পৃষ্ঠের নীচু অংশে সঞ্চিত হয়। জলধারার এক অংশও বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সজ্জিত হয়। এই সঞ্চয়ের এক অংশ ভূ-গর্ভে প্রবেশ করলেও অন্য অংশ সরাসরি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। এভাবে বাধাপ্রাপ্ত সঞয় ও বাষ্পীভবন জলচক্রে অংশগ্রহণ করে।

    বাষ্পমোচন (Evapotranspiration): 

    জলভাগ থেকে বিপুল পরিমাণ জলরাশি বাষ্পীভূত হয়। একে বাষ্পীভবন বলে। আবার উদ্ভিদরাজি শিকড় মাধ্যমে যে জল মাটির অভ্যন্তর থেকে সংগ্রহ করে কাণ্ড, শাখা, পাতায় সঞ্চালিত করে তার থেকে উদ্‌বৃত্ত জল সূর্যতাপে বায়ুমণ্ডল কর্তৃক শোষিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন (Transpiration) বলে। বাষ্পাকারে এই জল বেরিয়ে যায় বলে একে বাষ্পমোচন (Evapotranspiration) বা বাষ্পীয় প্রস্বেদনও বলে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী অরণ্যের উপস্থিতি বাষ্পীয় প্রস্বেদনের সহায়ক। অরণ্য সংহারের ফলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলেই বাষ্পীয় প্রস্বেদনের হার হ্রাস পেয়েছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের ঘনীভবন বিলম্বিত হওয়ায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। মরুকরণ (Desertification) রোধে উদ্ভিদ চারা রোপণ করে বৃক্ষরাজির বিস্তার ঘটিয়ে জলীয় বাষ্পমোচন বৃদ্ধি করা গেলে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বনজ উদ্ভিদ ও শস্যাদির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

    বাষ্পীভবন (Evaporation):

    জলচক্রের অন্যতম প্রধান উৎস জলীয়বাষ্প। প্রকৃতি থেকে যে প্রক্রিয়ায় জল তরল কিংবা কঠিন অবস্থা থেকে উয়তার প্রভাবে বাষ্পীভূত হয় এবং পরিশেষে বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হয়, তাকেই বাষ্পীভবন বলে। সূর্যের তাপে সাগর, মহাসাগর ইত্যাদি অঞ্চল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়। জলীয়বাষ্প সাধারণত বায়ু অপেক্ষা হালকা বলে তা সহজেই ওপরে উঠে যায়। পৃথিবীর মোট বাষ্পীভবনের 84% সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এবং বাকী 16% পতনশীল অধঃক্ষেপণের কিছু অংশ মৃত্তিকায়, জলাশয়, ভৌমজল ও উদ্ভিদের বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানে সূর্যের উয়তার আধিক্যে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি। আবার শীতকাল অথবা গ্রীষ্মকালে বাষ্পীভবনের হার অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় ভূ-অভ্যন্তরের জল, গাছ শিকড়ের মাধ্যমে শোষণ করে এবং অতিরিক্ত জল পাতার রন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। আবার মৃত্তিকাস্থিত জল সরাসরিভাবে মৃত্তিকাস্থিত বায়ুতে বাষ্পীভূত হতে পারে।

    Bookmark
    0% Complete
    error: Content is protected !!
    Scroll to Top