সম্পদমূলক দৃষ্টিভঙ্গি (Resource Approach)
রিসোর্স অ্যাপ্রোচ বা সম্পদমূলক দৃষ্টিভঙ্গি মানবীয় ভূগোলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের স্থানিক বন্টন, ব্যবহারের পদ্ধতি এবং প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে। এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো সম্পদের ব্যবহার ও তাদের স্থানিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানব সমাজে তার প্রভাব বিশ্লেষণ করা।
সম্পদমূলক দৃষ্টিভঙ্গির মূল উপাদানসমূহ:
১. প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural Resources):
প্রাকৃতিক সম্পদ হলো ভূতাত্ত্বিক এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত সম্পদ, যেমন খনিজ, বন, জল, মাটি ইত্যাদি। মানবীয় ভূগোলের রিসোর্স অ্যাপ্রোচ প্রাকৃতিক সম্পদের স্থানিক বন্টন, ব্যবহারের পদ্ধতি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্লেষণ করে।
২. মানব সম্পদ (Human Resources):
মানব সম্পদ হলো মানুষের দক্ষতা, জ্ঞান, এবং পরিশ্রম। রিসোর্স অ্যাপ্রোচ মানুষের সম্পদ ব্যবহারের পদ্ধতি, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, এবং সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে বিশ্লেষণ করে।
৩. সম্পদের স্থানিক বন্টন (Spatial Distribution of Resources):
রিসোর্স অ্যাপ্রোচ সম্পদের স্থানিক বন্টন এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে। এটি বিশ্লেষণ করে কোন সম্পদ কোথায় পাওয়া যায় এবং তার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব কী।
৪. সম্পদের ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা (Resource Utilization and Management):
সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা রিসোর্স অ্যাপ্রোচের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি বিশ্লেষণ করে কিভাবে সম্পদ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর প্রভাব কেমন, এবং কীভাবে টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. টেকসই উন্নয়ন (Sustainable Development):
রিসোর্স অ্যাপ্রোচ টেকসই উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্ব দেয়, যেখানে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করা হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ না করে। এটি সম্পদের পুনরুদ্ধার, পুনর্ব্যবহার, এবং সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়।
সম্পদমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ:
১. কৃষি ভূগোল (Agricultural Geography):
কৃষিতে রিসোর্স অ্যাপ্রোচ প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন মাটি, জল, এবং জলবায়ুর ব্যবহার এবং তাদের উৎপাদনশীলতা বিশ্লেষণ করে।
২. শিল্প ভূগোল (Industrial Geography):
শিল্পের ক্ষেত্রে রিসোর্স অ্যাপ্রোচ কাঁচামালের স্থানিক বন্টন, তাদের উৎস এবং শিল্পের অবস্থান নিয়ে গবেষণা করে। এটি শিল্পের পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব নিয়েও কাজ করে।
৩. শহর এবং অঞ্চল পরিকল্পনা (Urban and Regional Planning):
রিসোর্স অ্যাপ্রোচ শহর এবং অঞ্চল পরিকল্পনায় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে, যেখানে শহরের সেবা, অবকাঠামো এবং পরিবেশগত দিকগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৪. পরিবেশ ভূগোল (Environmental Geography):
পরিবেশ ভূগোলে রিসোর্স অ্যাপ্রোচ পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। এটি পরিবেশগত সমস্যা যেমন দূষণ, বন উজাড়, এবং জল সংকট নিয়ে বিশ্লেষণ করে এবং সমাধান প্রস্তাব করে।
উপসংহার:
সম্পদমূলক দৃষ্টিভঙ্গি মানবীয় ভূগোলের একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রাকৃতিক এবং মানব সম্পদের স্থানিক বন্টন, ব্যবহার, এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্লেষণ করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।