১. বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- ভূপৃষ্ঠে ও তার উপপৃষ্ঠীয় অংশে বহির্জাত প্রক্রিয়ার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
- এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী শক্তিগুলি হল — নদী, আবহবিকার, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল ইত্যাদি।
- এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজ করে।
- এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী শক্তিগুলি কোথাও এককভাবে, আবার কোথাও সম্মিলিতভাবে কাজ করে।
- ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী এই সমস্ত শক্তিগুলির মূল উৎস হল সৌর শক্তি।
২. অবরোহণ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
অবরোহণ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- এই প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়।
- আবহবিকার , পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন — এই তিনটি প্রক্রিয়ার দ্বারা অবরোহণ সংগঠিত হয়।
- ভূপৃষ্ঠে উচু এলাকায় এই প্রক্রিয়া কাজ করে।
- অবরোহণ প্রক্রিয়া ধীরগতিতে ঘটে।
- অবরোহণের শেষ সীমা বা ক্ষয়ের শেষ সীমা হল নিকটতম সমুদ্রপৃষ্ঠ।
৩. আরোহণ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
আরোহণ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- এটি একধরনের পর্যায়ন প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
- বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষযপ্রাপ্ত পদার্থ সঞ্চয়ের ফলে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
- এই প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের সঞয়জাত ভূমিরূপ গঠিত হয়।
- এটি একটি ধীর গতির প্রক্রিয়া।
৪. বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমি বা ভূপৃষ্ঠ কীভাবে সমতলে পরিণত হয়?
পর্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমি সমতলে পরিণত হয়। এই পর্যায়ন প্রক্রিয়া আবার দুই প্রকার- অবরোহণ ও আরোহণ। অবরোহণ প্রক্রিয়ায় উঁচুভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু ভূমিতে পরিণত হয়, এবং আরোহণ প্রক্রিয়ায় নীচু ভূমিতে ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ জমা হয়ে উঁচু ভূমিরূপ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়া দুটি নিরন্তর। এইভাবেই ক্রমাগত চলতে থাকা এই পর্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ক্ষয়, পরিবহণ ও সঞ্চয়কাজে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ভূমির সমতলীকরণ ঘটে।
৫. বহির্জাত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জলবায়ুর সম্পর্ক কী ? অথবা, বহির্জাত প্রক্রিয়ায় জলবায়ু কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে?
ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে যে সমস্ত প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে ভূমিরুপের বিবর্তন হয় তাদের বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে। এই বহির্জাত প্রক্রিয়াগুলি কিভাবে কাজ করবে সেটি নির্ভর করে জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের উপর, যেমন- উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা ইত্যাদি। যেমন- উয় আর্দ্র অঞ্চলে ভূমিরূপ পরিবর্তনে নদী মুখ্য ভূমিকা পালন করে, অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং উষ্ণ-শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
৬. ‘অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার কাজ গঠনমূলক এবং বহির্জাত প্রক্রিয়ার কাজ বিনাশমূলক’— কারণ ব্যাখ্যা কর।
ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট বলের প্রভাবে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে। মহিভাবক ও গিরিজনি আলোড়ন, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদি নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকের আপেক্ষিক স্থানান্তর ঘটে এবং ফলস্বরূপ প্রধান ভূপ্রকৃতিরূপে মহাদেশ ও মহাসাগর কিংবা পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি গঠিত হয়।
অপরদিকে ভূপৃষ্ঠের বাইরের বিভিন্ন শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে। আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয়, ক্ষয়ীভবন (নদীপ্রবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ, হিমবাহ ইত্যাদি) ইত্যাদি প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে অণু ভূমিরূপ গঠনে সাহায্য করে। ভূমিরূপ গঠনের ক্ষেত্রে অন্তর্জাত ও বহির্জাত প্রক্রিয়া দুটি অপরিহার্য চালিকাশক্তি। ভূঅভ্যন্তরীণ শক্তি ভূপৃষ্ঠে প্রাথমিক ভূমিরূপ তৈরি করে, যেখানে বহির্জাত শক্তি সময়ের সাথে সাথে সেগুলোকে পরিবর্তন ও রূপান্তরিত করে।
তাই উভয় প্রক্রিয়ার কাজের বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এটি বলাই যায় যে, ‘ অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার কাজ গঠনমূলক এবং বহির্জাত প্রক্রিয়ার কাজ বিনাশমূলক।