১. ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (Geomorphic Process) বলতে কী বোঝ?
Ans: যেসকল ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে ভূত্বকের উপরিভাগে ভূমিরূপের সৃষ্টি ও বিবর্তন হয়ে চলেছে, তাদের একত্রে ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (Geomorphic Process) বলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আকৃতি ও বৈচিত্র্য তৈরি হয় এবং এটি ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভূমিরূপ গঠনে ভূমিকা রাখা প্রধান প্রক্রিয়াগুলি অন্তর্জাত এবং বহির্জাত উভয় ধরনের। অন্তর্জাত প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের গভীরে ঘটে, যেখানে তাপ, চাপ এবং অন্যান্য শক্তির প্রভাব রয়েছে। অপরদিকে, বহির্জাত প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের ওপরে ঘটে এবং আবহাওয়া, জলবায়ু এবং অন্যান্য বাহ্যিক শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
২. যে দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া কার্যকর হয়?
Ans: অন্তর্জাত প্রক্রিয়া (Endogenetic Process) এবং বহির্জাত প্রক্রিয়া (Exogenetic Process)। এই দুই প্রক্রিয়া একত্রে ভূত্বকের বিভিন্ন রূপ তৈরি করে। অন্তর্জাত প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ঘটে এবং এর মধ্যে অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আবার, বহির্জাত প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের বাইরে ঘটে, যেখানে বায়ু, পানি, হিমবাহ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তি ভূমিরূপ পরিবর্তন করে।
৩. অবরোহণ প্রক্রিয়া (Degradation) কাকে বলে?
Ans: যে-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বহির্জাত শক্তিসমূহ ভূপৃষ্ঠের কোনো উঁচু জায়গাকে ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে সমতলভূমিতে পরিণত করে, তাকে বলে অবরোহণ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নদীর পানি, বায়ু এবং হিমবাহের কাজ অন্তর্ভুক্ত, যা স্থলভূমির উঁচু স্থানগুলোকে নীচু করে এবং সমতল করে তোলে। এর ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপ যেমন সমতল, পলল এবং বদ্বীপ তৈরি হয়।
৪. নগ্নীভবন (Denudation) কাকে বলে?
Ans: আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় এবং ক্ষয়ীভবন — এই তিনটি পদ্ধতির যৌথ ক্রিয়াশীলতায় ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তর ক্ষয়ীভূত হয়ে অপসারিত হয়। এর ফলে নীচের শিলাস্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, এই প্রক্রিয়াকেই নগ্নীভবন বলে। নগ্নীভবন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা পৃথিবীর ভূত্বকের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. অবরোহণ ও আরোহণের মূল পার্থক্য কী?
Ans: অবরোহণ ও আরোহণ প্রক্রিয়ার মূল পার্থক্য হল— অবরোহণ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের মাধ্যমে উঁচু ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায় এবং আরোহণ প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে নীচু ভূমি ভরাট হয়ে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি করে। এই দুই প্রক্রিয়া একে অপরের পরিপূরক, কারণ যখন একটি অঞ্চলে অবরোহণ ঘটে, তখন অন্যত্র আরোহণ ঘটে।
৬. আবহবিকার (Weathering) কাকে বলে?
Ans: আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন — উয়তা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির দ্বারা ভূপৃষ্ঠের শিলাসমূহের যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিচূর্ণন ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিয়োজন হওয়াকে আবহবিকার বলে। আবহবিকার ভূমিরূপ পরিবর্তনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা শিলার গঠন এবং তার অভিকর্ষের পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে।
৭. ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের মূল পার্থক্য কী?
Ans: ভূপৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে পদার্থের অপসারণ হল ক্ষয়ীভবন। অপরদিকে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর পদার্থ নেমে আসা হল পুঞ্জিত ক্ষয়। এই দুই প্রক্রিয়া একত্রে কাজ করে এবং ভূত্বকের শিলাসমূহের পরিবর্তন ঘটায়।
৮. নগ্নীভবনের সূত্রটি কী?
Ans: নগ্নীভবনের সূত্রটি হল— নগ্নীভবন = আবহবিকার + পুঞ্জিত ক্ষয় + ক্ষয়ীভবন। এই সূত্রটি বুঝতে সাহায্য করে কিভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া মিলিত হয়ে ভূমিরূপকে প্রভাবিত করে।
৯. পুঞ্জিত ক্ষয় (Mass wasting) কাকে বলে?
Ans: উচ্চভূমির ঢালের মৃত্তিকা ও শিলাস্তর অভিকর্ষের টানে ঢাল বেয়ে নীচে নেমে আসার ঘটনাকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে। এই প্রক্রিয়ায়, বিভিন্ন শক্তির প্রভাবে উপকূলবর্তী এলাকায় ভূপৃষ্ঠের গঠন পরিবর্তন ঘটে।
১০. কীভাবে পর্যায়ন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়?
Ans: অবরোহণ এবং আরোহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পর্যায়ন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়। পর্যায়ন প্রক্রিয়া ভূত্বকের সমতলকরণ এবং বিভিন্ন ভূমিরূপের উৎপত্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
১১. বিভিন্ন প্রকারের ভূ-প্রকৃতি (Landforms) কী কী?
Ans: বিভিন্ন প্রকারের ভূ-প্রকৃতি (Landforms) হল: পর্বত, উচ্চভূমি, পাদদেশ, প্লাবনভূমি, বদ্বীপ, উপত্যকা, বায়ুপ্রবাহ দ্বারা গঠিত বালির টিলা, জলপ্রপাত, হ্রদ, নদী, এবং সমুদ্রতল। এসব ভূমিরূপ ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্য এবং পরিবেশের গতিশীলতার নির্দেশ করে। প্রতিটি ভূমিরূপের গঠন ও উৎপত্তিতে ভৌগলিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
১২. কীভাবে নদীর জল প্রবাহিত হয়?
Ans: নদীর জল প্রবাহিত হয় তার উত্সস্থল থেকে গন্তব্যস্থলে, সাধারণত নিচু এলাকা অথবা সমুদ্রে। নদীর জল প্রবাহিত হওয়ার সময় বিভিন্ন ভূমিরূপ ও বাধা অতিক্রম করে, যেমন পাহাড়, উপত্যকা, এবং সমতল। নদীর প্রবাহের গতিবেগ ও সঞ্চয়ের ক্ষমতা পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়, যেমন বৃষ্টিপাত, ভূগর্ভস্থ জল, এবং ভূমিকম্প।
১৩. অববাহিকা (Watershed) কাকে বলে?
Ans: অববাহিকা (Watershed) হল একটি এলাকা যা নির্দিষ্ট একটি নদী অথবা জলাশয়ে প্রবাহিত জলকে সংগ্রহ করে। এই অঞ্চলের ভূখণ্ড, জলপ্রবাহ, এবং জলাভূমি একত্রে কাজ করে। অববাহিকা ভূগোল ও জলবায়ুর পরিবর্তনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
১৪. আদর্শ নদীর (Ideal River) গঠন কেমন?
Ans: আদর্শ নদীর গঠন হল একটি সূক্ষ্ম, সোজা এবং সংগঠিত পথ, যেখানে নদী ধারাবাহিকভাবে উঁচু স্থান থেকে নীচু স্থানে প্রবাহিত হয়। আদর্শ নদীর গঠন তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত: উত্সস্থল (Source), মধ্যভাগ (Middle Course), এবং নিম্নভাগ (Lower Course)। প্রত্যেকটি অংশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গঠন থাকে।
১৫. কীভাবে পলল ব্যজনী (Alluvial Plain) তৈরি হয়?
Ans: পলল ব্যজনী (Alluvial Plain) সাধারণত নদীর নীচু অংশে সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে তৈরি হয়। নদী যখন তার গতিতে অববাহিকার ধীরে ধীরে সমতল এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এটি অববাহিকায় জমা পড়ে পলল তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পলল জমা হয়ে উর্বর মাটি তৈরি হয়, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৬. গিরিখাত (Canyon) কাকে বলে?
Ans: গিরিখাত (Canyon) হল একটি গভীর, সংকীর্ণ উপত্যকা যা সাধারণত নদীর ক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়। গিরিখাত সাধারণত উঁচু পাহাড়ের পাশে দেখা যায় এবং এটি বিভিন্ন স্তরের শিলাসমূহ দ্বারা গঠিত হয়। গিরিখাতের গঠনকালে নদীর প্রবাহের গতি এবং শিলা সৃষ্টির প্রভাব থাকে।
১৭. ভূমিরূপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বায়ুর ভূমিকা কী?
Ans: বায়ুর ভূমিকা ভূমিরূপ পরিবর্তনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ু বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন ক্ষয়, সঞ্চয়, এবং পরিবহন ঘটায়। বায়ুর শক্তি উপকূলীয় অঞ্চলে উপকূলীয় ভূমিরূপ গঠনে, বালির টিলা তৈরি করতে এবং মাটি সংরক্ষণে প্রভাব ফেলে।
১৮. ক্ষয় (Erosion) কাকে বলে?
Ans: ক্ষয় (Erosion) হল ভূপৃষ্ঠের শিলা ও মাটির অপসারণের প্রক্রিয়া, যা বায়ু, জল, এবং অন্যান্য বাহ্যিক শক্তির মাধ্যমে ঘটে। এই প্রক্রিয়ার ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। ক্ষয় বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া, যেমন জলক্ষয়, বায়ুক্ষয় এবং হিমবাহ ক্ষয় দ্বারা সম্পন্ন হয়।
১৯. প্লাবনভূমি (Floodplain) কাকে বলে?
Ans: প্লাবনভূমি (Floodplain) হল একটি সমতল এলাকা যা নদীর দুই পাশের অঞ্চলে অবস্থিত এবং নদীর পানি ফুলে গেলে প্লাবিত হয়। এই অঞ্চলটি সাধারণত উর্বর মাটি দ্বারা আবৃত থাকে, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্লাবনভূমির গঠন নদীর প্রবাহের গতির উপর নির্ভর করে।
২০. ভূ-প্রকৃতির গঠনে জলবায়ুর ভূমিকা কী?
Ans: জলবায়ু ভূমিরূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃষ্টি, তাপ, বাতাস এবং আর্দ্রতা ভূমিরূপের বৈচিত্র্য তৈরি করে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষয় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে। জলবায়ুর পরিবর্তন ভূমিরূপে পরিবর্তন এনে দিতে পারে, যা পরিবেশের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।