1. Discuss evolution of Geography as a spatial science.

দৈশিক বিজ্ঞান হিসাবে ভূগোলের বিকাশ (Development of Geography as Spatial Science):

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভৌগোলিক ও অর্থনীতিবিদ দৈশিক পরিসরে ভৌগোলিক বিষয় ও বস্তুগুলির বণ্টনের ক্ষেত্রে দৈশিক বিন্যাস (Spatial order) বা কোনো সাধারণ নিয়ম (General rule) খোঁজার চেষ্টা করেন।

• 1929 সালে আলফ্রেড ওয়েবার (Alfred Weber, 1929) শিল্পের অবস্থানের বণ্টনের ক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়ম খুঁজে পান। 1966 সালে ভনথুনেন ( Vonthunen, 1966) কেন্দ্রীয় শহর বা বাজারের চারপাশে কৃষি জমির ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এরকম একটি সুন্দর দৈশিক বিন্যাস ব্যক্ত করলেন।
• ওয়াল্টার ক্রিস্টালার (Walter Christaller, 1966) দক্ষিণ জার্মানির মানচিত্রে সমান মাপের শহরগুলির বিন্যাসে সুন্দর একটি দৈশিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করলেন এবং মন্তব্য করেন যে, ভৌগোলিক বিষয়সমূহ তথা শহর বা বাজারকেন্দ্রগুলি দৈশিক পরিসরে ভৌতবিজ্ঞান ও জ্যামিতির নিয়ম মেনে বিন্যস্ত থাকে।
• ক্রিস্টালারের “Central place theory” বর্ণনা করতে গিয়ে বেরী (Berry) এবং প্রেড (Pred) ব্যাখা করেন যে—কোনো কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসের চারদিকে বস্তুসমূহের বিন্যাস পৃথিবীতে বস্তুরাজির বণ্টনের মৌলিক সূত্র। মানুষের সমাজজীবনেও এ ধরনের কেন্দ্রীকতার নীতি বা প্রবণতা মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা যায়। এভাবে একটি শহর বা বাজার স্থানীয় সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। আর এভাবেই একটি কেন্দ্রীয় স্থানের সৃষ্টি হয়। বড়ো শহর ছোটো শহরের তুলনায় তার চারপাশের বৃহৎ এলাকাতে প্রভুত্ব করতে পারে এবং এভাবে তার দৈশিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। গুরুত্বের পার্থক্য ও সেবার গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে শহরগুলির সেবাক্ষেত্রের বিস্তৃতির পার্থক্য হয় এবং এর ওপর ভিত্তি করে শহরগুলি দৈশিক পরিসরে বন্টিত হয়।
• “The crystallisation of mass about a nucleus is part of the elementary order of things. Centralistic principle are similarly basic to human community life. In this sense, the town is a centre of regional community and the mediator of that community’s com- merce, it functions, then as the central place. Central Place vary in importance. Those of higher order dominate larger regions than those of lesser order, excercise more central functions, and therefore have greater centrality. For all however, “the sum of the distances which rural residents travcentral place is the smallest conceivable sum.” – Berry & Pred, 1961
• লস (losch, 1954) দেশের ধারণার সঙ্গে অর্থনীতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে দৈশিক অর্থনৈতিক বিজ্ঞান otal Economic Science) ধারণার অবতারণা করেন। দৈশিক পরিসরে অর্থনৈতিক কার্যাবলীর অবস্থান রবর্তন আলোচনায় তাঁর এই ধারণা পরিস্ফুট হয়।
• ওয়াল্টার ইজার্ড (Walter Isard) দৈশিক অর্থনীতির (Space-economy) ধারণাকে গাণিতিক মডেল, সংশ্লেষ প্রভৃতির ব্যবহারের দ্বারা সমৃদ্ধ করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক রিজিওনাল সায়েন্স সিয়েসন (Regional Science Association) 1950-এর দশক থেকে পরবর্তী প্রায় 15 বছর নতুন বাংলার এই দৈশিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সচেষ্ট ছিল এবং সেখানে অর্থনীতিবিদরা বেশি সংখ্যায় অবদান রেখেছিলেন।

ভূগোলের এই নতুন ধারায় ক্রিস্টালার এবং লসের তত্ত্বের অনুসরণে দৈশিক পরিসরে শহরের বণ্টন এবং ফিবাকেন্দ্রগুলিতে যাতায়াতের দূরত্ব হ্রাসের প্রয়াস (distribution of cities in space and principle of ast effort expressed as distance minimisation in journey to service centres ) পর্যালোচনা প্রশিক বিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে ওঠে।

• উইলিয়াম গ্যারিসন এবং ডেইট্রিচ বারটেল (William Garrison, 1959 and Deitrich Bartel, (1973)-এর মতে, এভাবে ভূগোল শাস্ত্র একদিকে ভূগোল অন্যদিকে অর্থনীতির মেলবন্ধনে প্রণালীবদ্ধ দেশের  (“Science of space combined with system theory”) হিসেবে পরিণত হল।
• রিচার্ড পিটের (Richard Peet, 1998) মতে, এভাবে 1953-63 – এই দশ বছরে ভূগোল শাস্ত্র আঞ্চলিক বিবরণের বদলে দৈশিক বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল এবং পাকাপাকিভাবে আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ের মর্যাদা করল। “Altogether the decade, 1953-63 witnessed a shift from geography as regional description to geography as spatial science in the belated entry of a relactant discipline to scientific modernity.”  –R. Peet, 1998
• 1963 সালে ইয়ান বার্টন (lan Burton, 1963) মনে করেন, গত এক দশকে ভূগোল শাস্ত্রের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেছে—তিনি একে রাশিমাত্রিক বিপ্লব (Quantitative revolution) আখ্যা দেন। In the past decade geography has undergone a radical tranformation of spirit and purpose, best described as the ” quantitative revolution”. –Burton, 1963

দৈশিক বৈশিষ্ট পঠনপাঠনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি [Methods for Scientific Study of Space]:

স্টুয়ার্ট 1947 সালে (Stewart, 1947) কতকগুলি পদ্ধতির উল্লেখ করেন যার মাধ্যমে ভূগোল শাস্ত্র বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেমন-

1. পরিমাপযোগ্য তথ্য সংগ্রহ (Collection of Quantitative Observation),
2. অভিজ্ঞতালব্ধ গাণিতিক ছন্দে ওই তথ্যগুলির সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণ (Their condensation into empirical mathematical regularity),
3. ভৌতবিজ্ঞানের অনুসৃত দেশের ধারণার প্রেক্ষিতে এই সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। এভাবে পদার্থবিদ্যার নীতি তত্ত্বসমূহ ভূগোলের মতো সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহারের ফলে শুরু হল নতুন এক অধ্যায়ের, থাকে অনেকে দৈশিক পরিসরের সামাজিক ভৌতবিজ্ঞান (Social physics of space) হিসেবে আখ্যা দেন।
4. আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য আলোচনার মাধ্যমে ভূগোল শাস্ত্রে কখনো এ ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার সম্ভব হয়নি। পিটের (R. Peet, 1998) মতে, ভূগোল শাস্ত্রকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠার জন্য দৈশিক অনিয়ম (Spatial irregularity) কেন্দ্রিক পঠনপাঠন শুরু করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আধুনিক গাণিতিক বিজ্ঞানের আদলে ভূগোল শাস্ত্রকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘দৈশিক বিপ্লবের’ সূচনা হল যেখানে দেশকে কেবল পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের অনিয়মিত বণ্টনের স্থল হিসেবে না দেখে একে বিশুদ্ধ, সহজ এবং পরিমাপযোগ্য দূরত্বের প্রকাশ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। “Space had to be reconceptualized not only as the irregular characteristics of natural environments describable in metaphorical poetic terms, but as distance pure, simple and quantifiable.   – Peet, 1998. এই দৈশিক বিপ্লব ‘আঞ্চলিক প্রভেদ’ (areal differentiation) ধারণার থেকে ভূগোল শাস্ত্রকে মুক্ত করল।  এক্ষেত্রে দৈশিক পরিসরকে (Space) বৈজ্ঞানিক আধুনিকতার (Scientific modernity) প্রকাশ হিসেবে ধারণা করা হল।

ব্রায়ান বেরী 1964 সালে (Brian Berry) দৈশিক বিজ্ঞান হিসেবে ভূগোলের পঠনপাঠনের নিম্নলিখিত পদ্ধতিগত ও ধারণাগত রূপরেখা (methodological and conceptual outline) প্রদান করেন—

• অন্যান্য বৈজ্ঞানিকের মতো ভৌগোলিকদের তাঁদের কাজের দ্বারা শনাক্ত করা যায় না বরং একাধিক বিষয়কে একীভূত (integration) করার ধারণার দ্বারা তারা স্বতন্ত্র। “Like other scientist geographers are not identified so much by the phenomena they study as by their integrating concept.”  – Berry, 1964
• ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি দৈশিক পরিসরে ব্যাপ্ত। “The geographic point of view is spatial.” – Berry, 1964
• ভূগোলের একীভূত করার ধারণা (Concept of integration) দৈশিক বণ্টন, দৈশিক একীভবন, দৈশিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং দৈশিক কার্যপদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত। “Geography’s integrating concepts relate to spatial distributions, spatial integration and spatial processes.”   – Berry, 1964
• এই নতুন পঠনপাঠন পদ্ধতিতে মানুষ ও তার কার্যাবলীকে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত বাস্তুতন্ত্রের সবচেয়ে কর্তৃত্ব বিস্তারকারী অংশ হিসেবে ধরা হয়। “These concern the worldwide ecosystems of which humans are the dominant part.”  – Berry, 1964.

এভাবে ভূগোল শাস্ত্রে প্রণালী বিশ্লেষণের (System analysis) ধারণার ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হল। হাইপোথিসিস (hypothesis), তত্ত্ব (theory) ও মডেল (model) তৈরির মাধ্যমে ভূগোল শাস্ত্রে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের (logical positivism) সূচনা হল।

2. Briefly discuss the geography as a social science.

ভূমিকা:

ভূগোলের বিষয়বস্তু বিজ্ঞান সম্পর্কিয় কিনা এ নিয়ে চিরকালই ভৌগোলিকদের মধ্যে একটা অসন্তোষ রয়েই গিয়েছে ৷ তাই প্রশ্ন ওঠে ভূগোলকে কি সত্যিই বিজ্ঞান আখ্যা দেওয়া চলে? আবার অনেকে মনে করেন ভূগোলের বিষয়বস্তুর মধ্যে কোনো ধারাবাহিকতা নেই উপরন্তু নানা জটিলতায় পরিপূর্ন ।

উপরিউক্ত ধারনা হয়ত কয়েকজন ভৌগোলক এর ব্যাক্তিগত ভাবেই মানে হতে পারে। কিন্তু বিষয় হিসাবে ভূগোল সম্পর্কে এ কথা মানতেই হবে যে বিষয়  বস্তুগতভাবে নয়, পদ্ধতি বা নানান বিধিতন্ত্রের মধ্য দিয়েই বিজ্ঞান হিসাবেই ভুগোলকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়।

ভূগোলকে সামাজিক বিজ্ঞান বলার কারন:

• কোনো বিষয়কে বিজ্ঞান বা আচলে তখনি যখন ঐ বিষয় যুক্তিতর্কের নিয়ম মেনে চলবে। আর যুক্তি যা শুধু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ই অংশ তা নয়। উহা কলাবিভাগেয়ে অংশ। আবার দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয়। কলা বা সমাজবিজ্ঞানের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান আলাদা শুধু তার বিষয়বস্তুর প্রকৃতির জন্য । কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই লজিকের একান্ত প্রয়োজন বিষয়বস্তু ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। ভূগোল সেই কারনেই বিজ্ঞান বলে স্বীকৃতির দাবি রাখতে পারে।
• প্রাকৃতিক বা ভৌতিক বিজ্ঞানে যেমন সূক্ষ্ম ফলাফল পাওয়া যায়, সমাজ বিজ্ঞানে তা খুবই কম পাওয়া যায়। সূক্ষ্মতার এই অভাব হয় কারন, মানুষের সমাজকে কখনো ল্যাবোটরিতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থার মধ্যে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া আধুনিক মানব সমাজের জটিলতা এত চুতরকম যে তাকে নিরুপন ভাবে পরিমাপ করাও প্রায় অসম্ভব। কারন মানব সমাজ সর্বদাই চলনশীল ও পরিবর্তনশীল।
• সমাজবিজ্ঞানে চূড়ান্তভাবে রায় দেওয়া চলে না। বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মানবসমাজের কিছু বিষয়কে খুব সহজে পরিমাপ করা সম্ভব। যেমন- বিভিন্ন এলাকার জনসংখ্যা, অর্থনীতি প্রভৃতি। এগুলির ক্ষেত্রে তাই নানা যুক্তিসংগত বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা করা সম্ভব। অবার ভূগোলের কিছু বিষয় এক বিশাল যে তাকে বিশ্লেষন এর জন্য নানান পদ্ধতি ও বিচিত্র ধরনের মডেলের সাহায্য নিতে হয় । এইভাবেই ভূগোলে নানা দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক সত্যকে ব্যাখ্যা করার জন্য। তবে মনে রাখতে হবে যে সমাজবিজ্ঞানে নিখুঁত ভাবে শেষ কথাটি কখনোই বলা যায় না। যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে বলা যায় । 
• ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি একই- সুতরাং দেখা যাচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সঙ্গে ভৌগোলিক পদ্ধতির কোনো তফাৎ নেই। অতীতের বর্ণনামূলক ভূগোলের কাল থেকে আমরা আজ বহুদূর এসে গেছি। শুধুমাত্র সংখ্যা দিয়ে আলোচনা করলেই যা বিজ্ঞান, নতুবা নয়, এমন মত কেউ আজ আর মেনে নেন না। একথাও কেউ ভাবেন না যে পরিমানগত বা ম্যাজিক যাদু দন্ডের সাহয্যেই একমাত্র ভূগোলকে বিজ্ঞান হিসাবে স্বীকৃতি এনে দেওয়া সম্ভব ।

সামাজিক ভূগোলের ঐতিহাসিক দিক (HISTORICAL PERSPECTIVE OF SOCIAL GEOGRAPHY):

ডেভিড হার্ভের মতে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সাধারনভাবে যা সত্য, যা বিশ্বাস যোগ্য কোনো তাত্ত্বিক প্রনালীর সুসম্পদ অঙ্গ, তাকে বৈজ্ঞানিক সূত্র বলা চলে ৷ এক্ষেত্রে ভূগোলের বিষয়গুলি সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য এবং নানা প্রনালী দ্বারা বিশ্লেষণযোগ্য। সুতরং ভূগোলকে বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় বলা চলে।

মার্কনি ভৌগোলিক সংঘের সভাপতি জেলিনেছি (১৯৭৫) বিজ্ঞানের ৫টি বৈশিষ্ট্য ভাব করেন সেগুলি ভূগোল বিষয়ের বিশ্লেষন এর ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত। এগুলি হল-

1. সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই কার্যকরনের নিয়ম খাটাটে হবে।
2. চুড়ান্ত পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ জন পাওয়া সম্ভব হবে।
3. সব সমস্যাই সমাধানযোগ্য হতে পারে।
4. গবেষনার ফলাফল সাধারনভাবে সর্বত্র প্রযোজ্য হবে। E) সাবকি বৈজ্ঞানিক নিরপেক্ষতা থাকা সম্ভব হবে।

হ্যাগেট ও চোরলে (১৯৬৭) ভৌগোলিক পদ্ধতিতে এক বিপ্লব আনার চেষ্টা করেন। তারা দেখান যে আধুনিক জগতে অজস্র উপায়ে নানা বিষয়ে বিপুল পরিমানে তথ্যের বন্যা আসছে। এই বিপুল পরিমান তথ্যভাণ্ডারকে কাজে লাগানোর মত দৃষ্টান্ত বা প্যারাডাইম ভূগোলে নেই। ফলে ভূগোল ক্রমশই নানা দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। ভূগোলে দেখা দিচ্ছে বিশেষায়ন। তার মনে করেন ভূগোল নতুন এক মডেলভীততিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করুক, নতুন নতুন তথ্য ক্ষেত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করুক এবং তথ্যের মধ্যে বিন্যাস এই মত অনুসরন করে ও নিয়ম খুঁজে পাবার বৈজ্ঞানিক অভ্যাস গড়ে তুলুক। এইভাবে ভূগোল থেকে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বাদ দেওয়া গিয়েছিল এবং মাত্রিক বিপ্লবের সময় প্রাকৃতিক ও সামাজিক নানা ধরনের মডেল ও পরিসংখ্যান প্রয়োগ করে ভূগোল হয়েছিল বিজ্ঞানভিত্তিক।

ভূগোল হল দৈশিক বিজ্ঞান: স্কিফার (১৯৫৩) তার মতে ভূগোলের সূত্রগুলি দৈশিক। বিজ্ঞান সম্পর্কিত ফলে ভূগোলকে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন দৈশিক বন্টন সংক্রান্ত সূত্র গঠনকারী বিজ্ঞান বলা চলে। সুতরাং ভূগোল হল দৈশিক বিজ্ঞান। স্কীফার এর এই বক্তব্যই ১৯৫০-৬০ এর দশকে ভূগোল মাত্রিক বিপ্লব ঘটেতে সাহায্য করছিল ও ভূগোলকে ভাবলেখি থেকে নিয়মই বিজ্ঞানে পরিনত করেছিল।

ভূগোল একবারে বিজ্ঞান ও একধারে কলা :- ডার্বি মনে করেন ভূগোল একধারে যেমন বিজ্ঞান অন্যধারে তমনি কলা ৷ তাই বর্তমানরূপে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মেলানোর চেষ্টা করা ভূগোল। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও ক্রিয়াকলাপ এর প্রভাব ফেলতে পারে একমাত্র ভূগোল।

প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব :- মার্কসীয় বা মূলক ভৌগোলিকরা বলেন যে দৈশিক সম্পর্কগুলি আসলে সামাজিক সম্পর্কগুলির প্রকাশ মাত্র। সুতরাং প্রক্রিয়ার উপরে যথাযোগ্য গুরুত্ব না দিলে তার ফল হিসাবে গড়ে ওঠা আকারকে বোঝা যাবে না। তাই ভূগোলকে সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমেই বিশ্লেষন করা দরকার।

ভৌগোলিকদের ধারনায় ভূগোল নানা ভাবে বর্নিত কাউ একে Field science আবার কেউ Earth science বলে অবহিত করেন ৷ তবে যে যাই বলুক না কেন ভূগোলের কেন্দ্রীয় বিষয় কিন্তু যুক্তি তর্ক সম্বন্ধীয় বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন। স্বভাবতই ভূগোলকে বিজ্ঞানের অঙ্গ হিসাবেই মনে করা উচিৎ। বর্তমানে ভূগোলে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিবর্তন ঘটে চলেছে । ফলে ভবিষতেও ভৌগোলিক চিন্তাধারায় নানা পরিবর্তন আসতেই থাকবে এবং এই পরিবর্তন হবে সম্পূর্ন বিজ্ঞানভিত্তিক নানা সূত্র ও মডেলের মাধ্যমে। 

ভূগোলের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক: 

পরিধি ভূগোলের আলোচনার পরিধি নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই যৌগোলিকদের মধ্যে যথেষ্ট মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে ভূগোলের আলোচনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পর্যায়ক্রমিক বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে ভূগোলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাজবিজ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

 বাস্তবে ভূগোলে আলোচনার পরিধি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে সম্পূর্ন স্বতন্ত্রভাবে এই বিষয়টির অস্তিত্ব সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নত করা কষ্টকর৷ অন্যান্য শাখার সাথে এই শাখাটির বিশেষ সম্পর্ক আলোচনা করা হল এবং পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করা।

1) জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক:

জ্যোতির্বিজ্ঞান একটি বিশেষ প্রাকৃতিক বিজ্ঞান। এই শাখাতে বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক তাদের পরিক্রমা, আবর্তন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আবার ভূগোলে এসমস্ত জ্যোতিষ্কদের ঘুর্নন, পরিক্রমনের প্রভাব পৃথিবীর জীব জগতেও ওপর পড়ে। তাহা আলোচনা করা হয়।

ভূগোলের গণিত শাস্ত্রের অনুপ্রবেশের ফলে এই দুটি শাখা আরো সম্পর্ক যুক্ত হয়েছে। 

2) ভূতত্ত্ব ও ভূগোলের সম্পর্ক:

ভূতাত্ত্বিক আলোচনাতে কোনো ভূমিরূপের উৎপত্তির পিছনে কিধরনের আন্দোলন যুক্ত রয়েছে, শিলার গঠন, প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়। 

কিন্তু প্রাকৃতিক ভূগোলের সমালোচনার ক্ষেত্রে ভূতত্ত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। যেমন Process and stage এখানে “landscape”, “process” এবং Stage এই তিনটি পরিভাষা ভূগোল থেকা নেওয়া। আবার Structure: পরিভাষাটি ভূতত্ত্ব থেকে নেওয়া হয়েছে ।

3) ভূগোল ও জলবায়ুবিদ্যার সম্পর্ক:

জলবায়ুবিদ্যাতে বিভিন্ন জলবায়ুর উপাদান তাদের উৎপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়। আর ভূগোল আলোচনাতে জলবায়ুর উপাদান তাদের কার্যকরন সম্পর্কে এবং মানুষের উপর ইহাদের প্রভাব ইত্যাদির গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

4) ভূগোল ও গনিতের সম্পর্ক:

আধুনিক ভূগোল এ যথেষ্ট পরিমানে গনিতের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন Cartographic চিত্র প্রস্তুত এর সময় সম্পূর্নভাবে গনিতের সাহায্য নিই ।

5) ভূগোলের সাথে উদ্ভিদ বিদ্যার সম্পর্ক:

উদ্ভিদবিদ্যাতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভদের বণ্টন ও বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ, ফল, ফুল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর বর্তমানে Systematic geography এর অন্তর্গত বিষয় হিসাবে Plant geography একটি ভূগোলের শাখার উদ্ভব হয়েছে। যেখানে উদ্ভিদের জন্ম মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। 

6)ভূগোলের সাথে শরীরবিদ্যার সম্পর্ক:

শরীরবিদ্যা নামক জীবনবিজ্ঞানের শাখাটি ভূগোলের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। আধুনিক ভূগোলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দেহাকৃতি, চুলের প্রকৃতি, মুখাকার, দাঁতের গঠন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনার জন্য Geography of Races নামক একটি নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে। 

7) ভূগোলের সাথে প্রানীবিদ্যার সম্পর্ক:

জীববিদ্যার একটি অন্যতম শাখা হল প্রানীবিদ্যা। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রানীর জন্ম, মৃত্যু বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভূগোলে একটি নতুন শাখার উদ্ভব হল Animal Geography যে বিভিন্ন প্রানীর অভিযোজনে, বংশবিস্তার প্রকৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

8)ভূগোলের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক:

অর্থনীতিবিদ্যাতে উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরন তাদের মধ্যে পারষপরিক সম্পর্ক, অর্থ,বিনিময় ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ অর্থনৈতিক ভূগোলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎপাদনকে কিভাবে ব্যবহার উপযোগী করা যায় । মানুষের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যকলাপ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় ৷ সুতরাং এই দুই শাখা পরপর সম্পর্কযুক্ত। 

9) ভূগোলের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক:

ইতিহাসে বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার কথা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। আর আধুনিক ভূগোলের বিভিন্ন শাখাতে এসব ঐতিহাসিক ঘটনার পিছনে প্রাকৃতিক উপাদানের প্রভাব কতটা তাও আলোচনা করা হয় ৷ বলা হয় ‘History and Geography fit up entry circumtance of our perception: History that of time, and geography that of space.

10) ভূগোলের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এবং ভূগোল আধুনিককালে পরস্পর ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়েছে ৷ নতুন গড়ে ওঠা ভূগোলের একটি শাখা হল Political Geography যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারনা যেমন রাষ্ট্র, শাসনকর্তা, কেন্দ্রীয় অঞ্চল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় ৷ তাই বলা যায় যে এই দুই শাখা পরশর অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে যুক্ত ।

11) ভূগোলের সাথে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যার সম্পর্ক:

এই দুটি প্রাআকৃচিক বিজ্ঞান ভূগোলের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত তাই দেখা যায় গতি ত্বরন, Axial plain, Henve, Throw প্রভৃতি পদার্থবীদ্যার বিষয়গুলি ভুগোলের বিভিন্ন শাখাতে ব্যবহার করা হয়।

রসায়ন বিদ্যার রাসায়নিক বিক্রিয়া, দ্রবন, খনিজ গঠন, আপেক্ষিক গুরুত্ব প্রভৃতি বিষয়গুলি প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। সেদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে ভূগোলের সঙ্গে পদার্থ ও রসায়ন বিদ্যার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ।

উপরের আলোচনার থেকে দেখা গেল যে বিভিন্ন সামাজিক জৈবিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে শাখাগুলি থেকে ভূগোলের আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এ সমস্ত শাখাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বো ভূগোল একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।